ঢাকা, সোমবার ০৬, মে ২০২৪ ১:৫৮:৪১ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
বজ্রপাতে বসতঘরে আগুন, ঘুমের মধ্যে মা-ছেলের মৃত্যু এএফআইপি ভবন উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী আজ থেকে স্কুল কলেজ খোলা সুন্দরবনে আগুন নেভানোর কাজ শুরু জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন সিলেট ৬০ টাকার নিচে মিলছে না সবজি, মাছ-মাংসে আগুন আরও ২ দিন দাবদাহের পূর্বাভাস

সমতাভিত্তিক শিক্ষা পাঠ্যক্রম বিষয়ে অপপ্রচার বন্ধ করা প্রয়োজন 

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১১:৩৪ এএম, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ মঙ্গলবার

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

বিজ্ঞানভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক, মানবিক ও সমতাভিত্তিক শিক্ষা পাঠ্যক্রম বিষয়ে অপপ্রচার বন্ধ করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি  এর সদস্যবৃন্দ। 

আজ মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি)রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাব এর তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে সকাল ১১টায় সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি কর্তৃক আয়োজিত  বিজ্ঞানভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক, মানবিক ও সমতাভিত্তিক শিক্ষা পাঠ্যক্রম বিষয়ে অপপ্রচার বন্ধ হোক শীর্ষক গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ।

এছাড়াও  একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, নারী-পুরুষের সমতাভিত্তিক মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন দেশ ও সমাজ গঠনের লক্ষ্যে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য প্রণীত হয়েছিল ৭২ এর সংবিধান। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সংবিধানের আলোকে যুক্তিবাদী মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ গড়ার লক্ষ্যে দেশের শিক্ষানীতির উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। এরই প্রতিফলন ঘড়িয়ে সেই সময় কুদরত ই খুদা কমিশন গঠিত হয় ও শিক্ষা নীতি প্রণীত হয় বলেও মন্তব্য করেছে তারা।


প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাঃ ফওজিয়া মোসলেম জানান,শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো শিশুদের মধ্যে নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধে গড়ে তোলা, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করা। শিশু- কিশোর- কিশোরীদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা এবং বিশ্বায়নের এই যুগে সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তাদের দক্ষ ও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠতে প্রস্তুত করা। শিক্ষা মানব সম্পদ উন্নয়নে অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালন করে এবং জাতি গঠনে এর ভূমিকা অপরিসীম। বাংলাদেশের নারী আন্দোলন এবং এ দেশের সচেতন ছাত্র ও নাগরিক সমাজ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি বিজ্ঞানভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক, কুসংস্কারমুক্ত, জেন্ডার সংবেদনশীল, মানসম্মত শিক্ষানীতি ও শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য দীর্ঘদিন দাবি জানিয়ে আসছে। দীর্ঘ আন্দোলন এবং ক্রমাগত প্রচেষ্টার ফলে এবারের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের (প্রথম, ষষ্ঠ, সপ্তম শ্রেণীর) পাঠ্য বইয়ে বর্তমান সময়ের চাহিদা বিবেচনায় জেন্ডার সমতা, যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ট্রান্সজেন্ডার ইত্যাদি বিষয়বস্তুসমূহ অন্তর্ভূক্ত হয়েছে।

কিন্তু এই পাঠ্যবইয়ের বিজ্ঞান ভিত্তিক তথ্যের বিরুদ্ধে একটি সাম্প্রদায়িক, প্রতিক্রিয়াশীল, নারী পুরুষের সমতাবিরোধী মহল ক্রমাগত অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে যা আমাদের জন্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয়। নতুন পাঠ্যসূচি সম্বলিত পাঠ্যপুস্তক প্রকাশের পর অপপ্রচার আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

ধর্মীয় বিশ্বাস, মতবাদ ও মূল্যবোধের প্রতিফলন পাঠ্যপুস্তকে কতখানি হয়েছে, এবং বিজ্ঞান শিক্ষা বা বিজ্ঞানের বিভিন্ন মতবাদের

মাধ্যমে কোনো বিশেষ ধর্মের বক্তব্যকে ছোট করা হলো কিনা এ বিষয়ে সবচেয়ে বেশী অপপ্রচার চলছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়
সরাসরি ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা গঠনের সমর্থক উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী এ বিষয়ে অপপ্রচারে সোচ্চার।

গত ২৭ জানুয়ারি বায়তুল মোকাররমের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে খেলাফত মজলিস বলেছে- নতুন পাঠ্যবইয়ো ইসলামি মূল্যবোধ বিসর্জন দেয়া হয়েছে। বাংলার মুসলিম শাসকদের ছোট করে দেখানো হয়েছে। তারা ডারউইনের বিজ্ঞান ভিত্তিক মতবাদকে ইসলামী বিশ্বাস ও মূল্যবোধের উপর আঘাত বলছে। পেশাজীবী অধিকার পরিষদ নামক একটি সংগঠনও জাতীয় প্রেসক্লাবে আলোচনা সভা করে বলেছে যে পাঠ্যবইয়ে ইসলামী সংস্কৃতি উপেক্ষা করে হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এই অপপ্রচারের তৎপরতা সবচেয়ে বেশী দেখা যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বিভিন্ন ভিডিও কনটেন্ট, এডিট করে মিথ্যা ছবি সংযুক্ত করে ও লেখনির মাধ্যমে তারা অপপ্রচার চালাচ্ছে। আর এই বিষগুলোকে পুঁজি করেই বিভিন্ন মহল গুজব ছড়াচ্ছে। উল্লেখ্য যে, এই উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী পাঠ্যবইয়ের ছবি এডিট করে বানর থেকে মানুষ ৯ম, ১০ম শ্রেণীর কৃষি শিক্ষা বইনো আনারসের ছবির বদলে নারিকেলের ছবি ব্যবহার করে নানা রকম গুজব রটাচ্ছে। শোনা যাচ্ছে তারা ভারতের পশ্চিম বাংলার বইয়ের ছবির মলাট ব্যবহার করে তা বাংলাদেশের বই বলে মানুষের মনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।

রাশেদা কে চৌধুরী তার লিখিত বক্তব্যে জানান,সম্প্রতি আমরা একটি গবেষণার তথ্যে দেখেছি যে এখন যে শিশুটি পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ছে আগামী এক দশক পরে সে যখন চাকরির বাজারে প্রবেশ করবে তখন ৬০ শতাংশ চাকরির অবলুপ্তি ঘটবে। এ জন্য অনেক দেশই তার শিক্ষাক্রমে কোন চ্যালে না থাকলেও তারা পাঠ্যপুস্তক ও কারিকুলাম পরিবর্তন করেছে। আমরা মনে করি এই চ্যালেঞ্জগুলো মাথায় রেখেই এনসিটিবিও নতুন পাঠ্যক্রম করেছে।৬ষ্ঠ শ্রেণীর বিজ্ঞান অনুশীলন বইতে মানব শরীর শিরোনাম অংশে কিশোর- কিশোরীর বাবাঃসন্ধিকালীন শারিরীক পরিবর্তনের বর্ণনা আছে। এসব দিয়ে অপপ্রচারের ফলে অভিভাবকদের মনে দ্বিধা দ্বন্দ্ব তৈরি হচ্ছে। যদিও চিকিৎসাবিদরা বলছেন বইয়ে সঠিক এবং বয়স উপযোগী তথ্যই আছে।

এই অপপ্রচার শুধু বিজ্ঞান বিরোধী বা সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলকই নয়, আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির উপর আঘাত করা হচ্ছে। পান শোনা, নাচ, বাঁশি, হারমোনিয়াম, তবলা, মাটির পুতুল, সার্কাস, মঙ্গল শোভাযাত্রা, নববর্ষ পালন এগুলো বাঙালি সংস্কৃতির অংশ যা হাজার বছর ধরে পালিত হয়ে আসছে। এগুলোর বিরুদ্ধে চালানো হচ্ছে নানাধরণের ওভার। ভ্রমণ পিপাসুর জন্য দিনাজপুরের কান্তজির মন্দির কেন দেয়া হলো তা নিয়োও চলছে সাম্প্রদায়িক সমালোচনা । কিন্তু হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, আদিবাসী দলিত, হরিজন সকলের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমাদের এই দেশ স্বাধীন হয়েছিলো। স্বাধীনতা পূর্ব পাকিস্তান উপনিবেশিক শাসন আমলেও আমাদের সংস্কৃতির উপর আঘাত এসেছিল। কিন্তু জনগণের আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালির এই সংস্কৃতি ক্রমেই দৃঢ় ও বিকশিত হয়েছে। আজকে আবারও সময় এসেছে মুক্তিযুদ্ধের সেই চেতনাকে সমুন্নত করে আমাদের সংস্কৃতিকে অগ্রসর করে নিয়ে খাওয়ার।

শিক্ষাক্রম নিনো বিভিন্ন অপপ্রচার ও জনবকে অনেক সময় বিচ্ছিন্ন মনে হলেও প্রতিটি ঘটনা সাম্প্রদায়িকতার একই সুতোয় বাধা এবং অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে আমাদের সম্প্রীতি ও সংস্কৃতিকে বিনষ্ট করার অপচেষ্টা । কিন্তু এই অপপ্রচারের ঘটনায় প্রকৃত অপরাধী কারা তা জানা সত্ত্বেও অপরাধীনের স্বরূপ সবার সামনে উন্মোচন করা হচ্ছেনা। তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা হচ্ছেনা বরং অপ্রত্যাশিতভাবেই কোনো আলোচনা ছাড়াই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুইটি বই প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে । যার ফলে আমাদের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা গ্রহণ বিঘ্নিত হচ্ছে। বিষয়বস্তু অপরিবর্তিত রেখে এই পাঠ্যপুস্তকে যে সকল ভুলত্রুটি রয়েছে তা সংশোধন করে দ্রুত পাঠ্যপুস্তক শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

আরও একটি বিষয় আমাদের মনে উদ্বেগ তৈরি করে যে, সরকারের বিভিন্ন প্রণোদনা ও সুযোগ সুবিধা থাকা সত্ত্বেও সরকারী। প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ কম। এইসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারছেনা। অপরদিকে মাদ্রাসার সংখ্যাও যেমন বাড়ছে, তেমনি এক শ্রেণীর মানুষ মাদ্রাসার সন্তান ভর্তি করানোর জন্য অগ্রাহী হয়ে উঠছেন। এই মাদ্রাসাগুলোর কারিকুলাম, শিখন পদ্ধতিসহ তার আউটপুট মনিটরিং করা দরকার। শুধু মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত জনশক্তি বর্তমানে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারেনা। এক্ষেত্রে বিজ্ঞানভিত্তিক, অভবিশ্বাস ও কুসংস্কারমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক, জেন্ডার সংবেদনশীল, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশপ্রেম, মানবিক ও মানবাধিকারের মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষানীতি প্রণয়ন করতে হবে। আধুনিক যুক্তবাদী, ভবিষ্যতমুখি, ন্যায়ভিত্তিক গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে ভূমিকা রাখবে। এ ছাড়াও সাধারণ শিক্ষার সাথে। সমন্বয় রেখে মাদ্রাসা শিক্ষার কারিকুলাম যুগোপযোগী করতে হবে এবং মাদ্রাসার জন্য একটি নির্দিষ্ট নীতিমালা থাকতে হবে। আমরা আরও লক্ষ্য করছি যে, ধর্মীয় সমাবেশ ও ওয়াজ মাহফিলের মাধ্যমে নারী বিরোধী, বাঙালি সংস্কৃতি চেতনা বিরোধী বা সাধারণ মানুষের মনে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে। এ সকল ওয়াজেও বর্তমানে পাঠ্য পুস্তক নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে বিভ্রান্তিকর ভুল তথা ছড়ানো হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের কোন জোরালো ভূমিকা আমাদের নজরে আসেনি। আমরা জানি গণমাধ্যম চলমান সমাজের দর্পণ। তাই আমরা আশা করবো এই বিষয়গুলোতে মিডিয়া সচেতন দৃষ্টি রাখবে এবং প্রকৃত ও নিরপেক্ষ তথ্য প্রচার করে জনগণকে বিভ্রান্তি থেকে মুক্ত করবে।
উল্লেখ্য, বিজ্ঞানভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক, কুসংস্কারমুক্ত, জেন্ডার সংবেদনশীল, মানসম্মত পাঠ্যক্রমের বিরুদ্ধে যারা অপপ্রচার চালাচ্ছে তাদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় এনে তাদের শান্তি নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের সরকারকে এই অপশক্তির বিষয়ে আরও সচেতন থাকতে হবে। আমাদের লাখো শহীদের প্রাণের বিনিময়ে এবং লাখো নারীর সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া অদেশ ও সংস্কৃতির ওপর কোনরকম আঘাত আসলে আমরা অবশ্যই তা ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিহত করবো বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন, ডাঃ ফওজিয়া মোসলেম,সভাপতি বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।রাশেদা কে চৌধুরী,নির্বাহী পরিচালক গণস্বাক্ষরতা অভিযান।গোলাম কুদ্দুস,সভাপতি সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। প্রফেসর মোহাম্মদ মশিউজ্জামান, সদস্য শিক্ষাক্রম এনসিটিবি।শাহরিয়ার কবির,সভাপতি একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ। মফিদুল হক, বিশিষ্ট কলামিস্ট ও ট্রাস্টি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।রোকেয়া কবির, নির্বাহী পরিচালক বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ। 

আলোচনা সভায় সসভাপতিত্ব করেন, ডাঃ ফওজিয়া মোসলেম,সভাপতি বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।